14_dal

আ’লীগের শরিকদের আসনে বিএনপির জয়ের হাতছানি!

সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে আওয়ামী লীগের শরিকদের বিজয়ী আসনগুলো এবার হাতছাড়া হতে পারে। পাশাপাশি এসব আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। খোদ ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল নেতারা এমন আশঙ্কা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু নির্বাচনের আগে সবাই দলের সিদ্ধান্ত্ম মেনে নেবে। প্রার্থীদের টানাপড়েন ফলাফলে প্রভাব ফেলবে না।

সূত্র জানায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিক এমপিদের সম্পর্ক দা-কুড়াল। দলটির প্রার্থীরা চান না শরিকদের কেউ ফের এমপি হোক। কারণ এমপি হলে আগামীবারের জন্যও তিনি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়বেন। আর শরিক প্রার্থী পরাজিত হলে পরের বার মনোনয়ন নিয়ে সমস্যা হবে না। এ অবস্থায় উভয়ের রেশারেশিতে বিএনপি প্রার্থীরা শরিকদের আসনুগলোতে সহজেই জয়লাভ করবেন বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

রাজনৈতিক বিশেস্নষকদের মতে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে রাজনীতির যে সমীকরণ দাঁড়াবে, তাতে বিএনপির মতো জনপ্রিয় দলের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অসহযোগিতা ও বিদ্রোহী প্রার্থীকে মোকাবেলা করে ক্ষমতাসীন মহাজোট শরিক সাংসদদের দুই-একটি আসন বাদে সবগুলোতেই পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মতে, দল এবার শরিকদের মনোনয়ন সংখ্যা না কমালে ভুল করবে। কারণ এমনিতে বর্তমান এমপিদের এলাকাতে অস্ত্মিত্ব নেই, আর গতবারের মতো এবার নির্বাচন হবে না। এমপিরা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করায় তাদের পক্ষে কেউ কাজ করবে না। আওয়ামী লীগ এমপি প্রার্থীরাও তাদের সহযোগিতা করবে না; সে সুযোগে বিএনপি প্রার্থীরা সহজেই ওইসব আসনে জয় ছিনিয়ে নেবে।

নেতারা আরো বলেন, আওয়ামী লীগের উপর ভর করে শরিক দলের নেতারা এমপি হয়েছেন। ফলে দলের প্রার্থীদের কপাল পুড়েছে। তারা এবার নির্বাচনের জন্য জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন,

দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। তারা জানেন এমপিরা জয় পাবে না, কারণ তারা অস্ত্মিত্বহীন। নিজেদের নেতাকর্মী নেই, আওয়ামী লীগ কর্মীরা কাজ না করলে তারা পাস করবেন না।

এছাড়া শরিক প্রার্থীরা জয়লাভ করম্নক তা চায় না আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। কারণ একবার এমপি হলে পরবর্তীতে সে আসনের জন্য দল তাকেই চিন্ত্মা করে। আর হারলে পরবর্তীতে তারা দল থেকে নির্বাচনের সুযোগ পাবে। তাই এবার আর ভুল করতে চান না আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে একাদশ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা সহজে জয়লাভের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সূত্র জানায়, সাংসদদের স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও নানাভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের বঞ্চিত করার কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মারমুখী অবস্থানে রয়েছেন। সাংসদরা নিজস্ব গ-ির বাইরে এমপিরা কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। এলাকার লোকজন এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিভিন্ন কাজে। নেতারা জানান, জনগণের সব দাবি থাকে আওয়ামী লীগের কাছে।

এ অবস্থায় দলের ওপর ভর করে জয়ী হওয়াকে আসনগুলোর সাবেক আওয়ামী লীগের সাংসদরা এবার আর মেনে নিতে পারছেন না। নেতারা বলেন, ‘এলাকার লোকজন আমাদের চিনে, শরিক সাংসদরা কাজ না করায় আমাদের ইজ্জত ও আওয়ামী লীগের ফিল্ড নষ্ট হয়েছে। তাই তারা এবার জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং এলাকায় ঘোষণা করছেন দলের মনোনয়ন না পেলে তারা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করবেন। সেজন্য জোটের এই পরিস্থিতিতে বেশ চিন্ত্মিত শরিক সাংসদরা।’

আবার অনেক আসনে এমপিরা শুধু নামেই আছেন; বাহ্যিকভাবে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের হাতে। স্থানীয় নেতারা পাশে না থাকলে এমপিরা এলাকায় ঢুকতে পারবে না বলে মন্ত্মব্য অনেক নেতার। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশনার কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন না।

তবে সম্প্রতি কুষ্টিয়ার-২ আসনের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা চাচ্ছেন না এই আসন থেকে ইনু ফের পাস করে সংসদে যান। এ ছাড়া অন্য অনেক আসনে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়ে সংঘর্ষও হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেক নেতা।

কুষ্টিয়ায় এক সমাবেশে হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার।’ এর পরদিন কুষ্টিয়ায় জাসদের সমাবেশে ইনু বলেন, ‘তারা সংখ্যায় বিপুল না হলেও তাদের ছাড়া ‘হাজার বছরেও’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আপনারা ৮০ পয়সা থাকতে পারেন। আপনি এক টাকার মালিক না। যতক্ষণ এক টাকা হবেন না ততক্ষণ ক্ষমতা পাবেন না। আপনি ৮০ পয়সা আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে তবেই এক টাকা হবে। আমরা যদি না থাকি তাহলে ৮০ পয়সা নিয়ে আপনারা (আ’লীগ) রাস্ত্মায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।’

এছাড়া এর আগে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ‘ষড়যন্ত্রকারীদের একজন’ আখ্যায়িত করেছেন জাসদের অপর অংশের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরম্নল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান। আগামীতে এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে।

এদিকে অনেক আসনেই আওয়ামী লীগ ও শরিকদের মাঝে অন্ত্মর্দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। ঢাকা-৮ আসনের সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ আসনে নির্বাচন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, দীর্ঘদিনেও এই এলাকায় তিনি কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। তাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ঢাকার নির্বাচন সরাসরি কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাই তারা কিছু করতে পারেন না। তবে তার পক্ষে নেতাকর্মীদের কাজ করানো তাদের জন্য কষ্টকর হবে।

ফেনী-১ এর সাংসদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনীর জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, এ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দলের শক্তিশালী প্রার্থীরও জয়ের সম্ভাবনা নেই, সেক্ষেত্রে জাসদ তো হিসাবের বাইরে। আর অন্য দলের প্রার্থীর জন্য তাদের নেতাকর্মীরা কেনই বা পরিশ্রম করবে যিনি তাদের সঙ্গে সম্পর্কই রাখেন না।

নড়াইল-২ এর সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান। আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক রাশিদুল বাশার ডলার যায়যায়দিনকে বলেন, গতবারের মতো নির্বাচন যদি না হয় তাহলে বর্তমান এমপির জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। জয় পেতে হলে জোট থেকে অবশ্যই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। তিনি বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। তারা পাস করলেও দুই-তিন হাজারের বেশি ভোট পাননি। সেক্ষেত্রে শরিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন দিলে বিএনপিকে পাস করতে বেগ পেতে হবে না।

দেশের অন্যান্য জেলায় জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাসীনরা ছাড় দিলেও রংপুর অঞ্চলে এবার ছাড় দিতে নারাজ। জাতীয় পার্টির পরিবর্তে রংপুরকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। কুড়িগ্রাম-৪ এর সাংসদ জাতীয় পার্টির (জেপি) রম্নহুল আমিন। এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, জোটের মনোনয়ন পেলেও তিনি এবার জয়লাভ করতে পারবেন না। কারণ প্রথমত, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাজে লাগাতে পারবেন না অতীতে তিনি যোগাযোগ রক্ষা না করার জন্য। দ্বিতীয়ত, জাতীয় পার্টিরও আলাদা প্রার্থী থাকবে বিধায় তারা ছাড় দেবে না, আর বিএনপি তো বিরোধী হিসেবে নির্বাচন করবেই। তাই ত্রিমুখী লড়াইয়ে জয়লাভের জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রয়োজন এ আসনে।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জাকির হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, জাতীয় পার্টির ঘাঁটিকে তিনি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানিয়েছেন। গত নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। এবার বর্তমান এমপির পাস করার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে হাফিজুর রহমান এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এছাড়া জাসদের পঞ্চগড়-১, বগুড়া-৪, চট্টগ্রাম-৮ আসন; তরিকত ফেডারেশনের চট্টগ্রাম-২ ও লক্ষ্ণীপুর-১ আসন; ওয়ার্কার্স পার্টির ঠাকুরগাঁও-৩, রাজশাহী-২, সাতক্ষীরা-১ আসন ও জাতীয় পার্টির (জেপি) পিরোজপুর-২ আসনে নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। প্রার্থীদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে এসব আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তাই জয়ের জন্য অবশ্যই আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, জোটের প্রার্থীদের ছাড় দেয়া হবে। তবে কাউকে কোনো আসনে এককভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে দেয়া হবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, নির্বাচনের এখনো অনেক দেরি। দল ও জোটের সব প্রার্থী নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবেই। এতে চিন্ত্মার কিছু নেই। মনোনয়ন দেয়ার পর সব ঠিক হয়ে যাবে।

দলের সভাপতিম-লীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারম্নক খান যায়যায়দিনকে বলেন, দল থেকে জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে। জোটের ক্ষেত্রেও একই বিষয় বিবেচনা করা হবে। জয়লাভের ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ আন্ত্মরিক। এজন্য সবাই নিজের জনপ্রিয়তা দেখানোর চেষ্টা করছেন; তবে মনোনয়ন দেয়ার পর প্রার্থীদের মধ্যে সমস্যা থাকবে না। আর সমস্যা সমাধানে ও দলীয় শৃংখলা রক্ষায় আমরা কঠোর হবো।

এ বিষয়ে জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, জোট করা হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে। একদল আরেক দলের দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য। শরিক দলগুলো ছোট বিধায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেছে। এখন তারা অসহযোগিতা করলে তো আর জোট হলো না।

যায়যায়দিন

দু’জনের দেখা ও কথা হবে?

সশস্ত্র বাহিনী দিবস (২১ নভেম্বর)। । ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণের সূচনা করেছিল। দিবসটিকে কেন্দ্র বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী।এ দিন বিকালে ক্যান্টনমেন্টের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য,ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। যোগ দেন বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও। এই অনুষ্ঠানেই একাধিকবার কথা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে।

দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রীর মধ্যে আবারও আলোচনা হয় কিনা বা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসন্ন সংকট সমাধানের কোনও আশা উন্মোচিত হয় কিনা, দেশবাসী নজর এখন সেদিকে। তবে ১৯ নভেম্বর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দুই দলের সাধারণ সম্পাদকের কুশল বিনিময়ের পর দুই প্রধান নেত্রীর ভাব-বিনিময়ও যেন কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে।

আর সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনও প্রতিফলন বুধবার সেনাকুঞ্জে দেখা গেলে, সেটি হবে দেশবাসীর কাছে আনন্দের বার্তা। তবে এই দেখা ও কথা হওয়া-না হওয়ার পুরো বিষয়টিই এখনও অন্ধকারে। ২১ নভেম্বর বিকালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি বিএনপি।

খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নে সাবেক সেনাপ্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার না পাওয়ার কথা না। আমি পেয়েছি। একজন সাবেক সেনা প্রধান হিসেবে তাদের আমন্ত্রণ পেয়ে গর্ববোধ করছি। তারা আমার বাসায় এসে দাওয়াত দিয়ে গেছেন। আমন্ত্রণপত্রও পেয়েছি।’

সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার স্বামী সাবেক সেনা প্রধান। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব আন্তরিক।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুই নেত্রীর মধ্যে সাক্ষাৎ হবে কিনা,এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া যাবেন কিনা,অনুমান করে তা বলা যাবে না।’

২০০৮ সালে সেনাকুঞ্জে দুই নেত্রীক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন,‘খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে যাবেন কিনা,এ ধরনের তথ্য নেই। তিনি যদি যান তাহলে দেখা হবে,কথা হবে। তখন তো সবাই দেখবেন।’

বুধবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা,দায়িত্বশীল কোনও সূত্র এখনও জানাতে পারেনি। তবে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে যে, তিনি দাওয়াত পেয়েছেন।

খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে অংশ নিতে ক্যান্টমেন্টে যাবেন কিনা, এ বিষয়ে এখনও দলের (মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত) কোনও সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আমন্ত্রণপত্র পাওয়া বা দলীয় প্রধান যাবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই।’

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন। তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনা প্রধানের স্ত্রী ও একজন বীর উত্তমের স্ত্রী হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়।’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘তিনি এখনও চেয়ারপারসনের ২১ নভেম্বর বুধবারের শিডিউল সম্পর্কে জানতে পারেননি।’

সশস্ত্র বাহিনীর এক ইফতারে (ছবি- সংগৃহীত)এর আগে ২০১০ সালে সর্বশেষ খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তার আগের দু’বছরও অংশগ্রহণ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ২০০৮ সালে সেনাকুঞ্জে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। ওই সময় তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে বলেছিলেন। আর খালেদা জিয়ার ভাষ্য ছিল, ‘কুশল বিনিময় হলো। জেলের মধ্যে কেমন ছিলাম, সে বিষয়ে কথা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. অব. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেনাকুঞ্জে যায়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের কুশল বিনিময় হয়েছিল।

উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin