forhad_majhar

আমাকে সীমান্তের ওপারে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল

কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের নামে বলতে বাধ্য করা হয় যে, আমি বিনোদনের জন্য বেরিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, সাদাপোশাকের কিছু লোক র‍্যাবের কাছ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। অপহরণকারীরা তাঁকে খুলনা-যশোর সীমান্তের দিক দিয়ে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।

আজ শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ওষুধ কেনার জন্য নিচে নেমে অপহরণের স্বীকার হন দাবি করে এই কবি-প্রাবন্ধিক বলেন, ‘তিনজন লোক আমাকে ঘিরে একটি সাদা মাইক্রোবাসে জোর করে তুলেই আমার চোখ বন্ধ করে ফেলে। সে সময় আমি আমার স্ত্রীকে ফোন করতে পারি।

এরপর বাঁচার জন্য টেলিফোন করা, টাকা পাঠানোসহ যা কিছু অপহরণকারীরা করতে বলে, তা–ই আমি করি। যেখানে তারা ছেড়ে দেয়, তা আমি চিনি না। আমি বুঝতে পারি তারা আমার ওপর নজরদারি করছে।

তাদের নির্দেশমতো সন্ধ্যায় হানিফ পরিবহনের গাড়িতে উঠলে গাড়িতে তারা আমাকে বাসের পেছনে বসিয়ে দেয়। আমি মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়ি। শোরগোল শুনে জেগে উঠি। এরপর সাদাপোশাকের কিছু লোক জোর করে আমাকে আবার নামিয়ে আনার চেষ্টা করে।’

ফরহাদ মজহার দাবি করেন, হত্যা করার জন্য বাস থেকে নামানো হচ্ছে ভেবে তিনি এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সাদাপোশাকের কিছু লোক র‍্যাবের দিকে বন্দুক তুলে শাসিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়।

তবে র‍্যাব রীতিমতো ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে আমাকে তাঁদের গাড়িতে ওঠায়। কিন্তু সাদাপোশাকের লোকগুলো র‍্যাবের গাড়ি থেকে আমাকে নামানোর চেষ্টা করে।’

ফরহাদ মজহার বলেন, অপহরণকারীরা তখনো এলাকায় থাকতে পারে ভেবে র‍্যাব তাঁকে খুলনায় নিয়ে চিকিৎসা-বিশ্রামের পাশাপাশি তদন্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু কে বা কারা র‍্যাবের গাড়ির দুই দিকের রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে পথরোধ করে রেখেছিল। পরে র‍্যাবের গাড়িসহ তাঁকে এক জায়গায় নিয়ে বলা হয় সেটি অভয়নগর থানা।

পুলিশের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করে ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘আমি ভিকটিম হওয়া সত্ত্বেও আমাকে জোর করে র‍্যাবের গাড়ি থেকে নামানো হয়। আমার সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে বলতে বাধ্য করা হয় যে, আমি বিনোদনের জন্য বেরিয়েছি। একটি গাড়িতে আমাকে নিয়ে উচ্চ স্বরে গান গাইতে গাইতে পুলিশ ঢাকার দিকে রওনা হয়।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমি জীবিত ফিরে আসায় আমাকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি সারা জীবন মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশে গুমের এ সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে, সব মান-অপমান সহ্য করে হলেও বাংলাদেশে এযাবৎ গুম হয়ে যাওয়া মানুষ যেন তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।’

গত ৩ জুলাই ভোরে বাসার কাছ থেকে অপহরণ হওয়ার অভিযোগ ও এর ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া, এরপর অপহরণ মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি ফরহাদ মজহার।

পুলিশ বলছে, ফরহাদ মজহার অপহরণ হননি, তিনি স্বেচ্ছায় খুলনা গিয়েছিলেন।

ফরহাদ মজহারের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, গত ৩ জুলাই ভোর পাঁচটার দিকে শ্যামলীর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর ৫টা ৫ মিনিটে ফরহাদ মজহার খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামেন।

ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফরহাদ মজহার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করে বলেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এ ঘটনায় রাজধানীর আদাবর থানায় ফরিদা আখতার বাদী হয়ে মামলা করেন।

সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের অভয়নগর এলাকায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর প্রথমে ফরহাদ মজহারকে খুলনায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরে সেখান থেকে সকাল পৌনে নয়টার দিকে তাঁকে ঢাকার আদাবর থানায় আনা হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে, সেখান থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিকটিম হিসেবে সেদিন তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে নিজের জিম্মায় দেন আদালত।

prothom-alo

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin