mirza-kader

আমরা তো চাই কিন্তু আপনারাই তো সাড়া দিচ্ছেন না: কাদেরকে ফখরুল

দেশে রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ায় সাধারণত বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয় না বললেইও চলে। নব্বইয়ে দশকে যতটুকুই হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে আর সেটাও হয় না।

রাজনীতির মাঠে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক যেন দা কুমড়ার সম্পর্ক। এমন আবহাওয়ায় পরস্পরকে দোষারোপে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হয়ে উঠেছে বিষাক্ত। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই সেটা আরো বেশি জটিল হয়েছে।

এরই মধ্যে রবিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দেখা হলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একত্রে। এসময় কথা ও কুশল বিনিময়ও হলো তাদের মধ্যে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে রাজনীতিতে এ যেন ভিন্ন নজির।

প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, রবিবার দুপুরে সৈয়দপুর থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলেন ওবায়দুল কাদের। পাশের আরেকটি কক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আছেন জেনে তার সঙ্গে দেখা করতে যান ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদেরকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন মির্জা ফখরুল। হাতের সঙ্গে হাত মেলালেন পরস্পর। এসময় মির্জা ফখরুলকে ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘ঢাকা এয়ারপোর্টে আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু শুনলাম আপনি আসছেন না। একসঙ্গে এলে ভালো হতো। কথা বলা যেত। তিনি বলেন, যেহেতু রাজনীতি করি, আলাপ–আলোচনার পথ খোলা রাখা ভালো। কথা হওয়াও দরকার।’

পারিবারিক কারণে একটু পরে আসতে হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো চাই আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে, কিন্তু আপনারাই তো সাড়া দিচ্ছেন না।

দুই নেতার মধ্যে দেখা ও কথা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলামের দেখা হয়েছে। কুশল বিনিময়ও হয়েছে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বলেন, বিমানবন্দরে দুই নেতার মধ্যে কুশল বিনিময় হয়েছে।

দুই নেতার আলাপের সময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত নন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে ফ্লাইটের সময় হলে ওবায়দুল কাদের সেখান থেকে ঢাকায় চলে আসেন। তখনো মির্জা ফখরুল অন্য আরেকটি বেসরকারি বিমান সংস্থার ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

প্রসঙ্গত, কাদের ও ফখরুলের রবিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ কোম্পানির ফ্লাইটে সৈয়দপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মির্জা ফখরুল সফর স্থগিত করেন। ফলে একই ফ্লাইটে দুই বড় দলের দুই নেতার সাক্ষাৎ হওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়। এরপর রবিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কাকতালীয়ভাবে তাদের মধ্যে দেখা ও কথা হয়।

রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পরস্পর বিরোধী আদর্শের দুই নেতার সাক্ষাৎকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক। আমরা আশা করবো তারা দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।

এই দুই নেতার সাক্ষাতের খবরটি টক অব দ্যা কাউন্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সর্বত্রই আলোচনা চলছে এ নিয়ে।

rtnn

খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও আ.লীগের নির্বাচনি ছক

জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগুচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার সম্ভাব্য রায় ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু করেছে। মামলায় তার সাজা হলে বিএনপি’র গন্তব্য কী হতে পারে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।

ক্ষমতায় থেকে খালেদা জিয়ার এই রায়ের সুফল ভোগ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ, তবে রায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গেলে দেশের মানুষ তা কিভাবে নেবে, তাতে কি লাভ-ক্ষতি হবে তার হিসাবও মেলাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়ার মামলার রায় হবে। এর মধ্য দিয়েই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ হবে।’

আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন ‘দলের ভেতরে খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। মামলায় খালেদা জিয়ার পরিণতি কী হতে পারে, তার সাজা হলে বিএনপি এটাকে কিভাবে নেবে এসব ভাবা হচ্ছে। পরিণতি ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক-এটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ রাজনীতি। বিএনপি কি খালেদা জিয়ার সাজার দোহাই দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে? তার সাজা হলে ‘জনমত’ কী রকম হবে? জনগণ বিএনপিকে সহানুভূতি দেবে কিনা-এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে আওয়ামী লীগে।’

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, আদালত তার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। তবে এটা নিশ্চিত, খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি দুই/তিনভাগে বিভক্ত হবে। সকল ভাগই পৃথক পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও দলটির মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হবে। তবে মামলার রায়ের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সতর্ক থাকবো।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা পরবর্তী রাজনীতি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। তবে মামলার রায় পরবর্তী পরিস্থিতিতে জনমত যাতে কোনোভাবেই বিএনপির পক্ষে না যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে আওয়ামী লীগ।

rtnn

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin