আবার সুশীলদের রাজনৈতিক দল

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ বিভিন্ন সময়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কখনো অনির্বাচিত সরকারের মদদ দিয়ে, কখনো নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, কিন্তু বরাবরই তারা ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ পঁচাত্তরের পর থেকেই বিভিন্ন অরাজনৈতিক এবং সামরিক সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, তাদেরকে মদদ দিয়েছে এবং তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ বিরাজনীতিকরণের বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে।

আবার এই প্রেক্ষাপটে এই সুশীল সমাজই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেছে। বিশেষ করে, দুর্নীতি, সুশাসন ইত্যাদি প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাজনৈতিক সরকারকে বিতাড়িত করার প্রয়াস পেয়েছে। অথচ তারাই সামরিক সরকারের দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেনি। বাংলাদেশের সুশীলরা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দল গঠনেরও চেষ্টা করেছেন।

তবে তাদের সবচেয়ে বড় উদ্যোগটি ছিল ২০০৬ সালে। এই সময়ে ড. মোহাম্মদ ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরপরই রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। এই রাজনৈতিক দল গঠনই ছিল পরবর্তীতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিকল্প হিসেবে রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তির উন্মেষ ঘটানোর প্রয়াস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার প্রকল্প থেকে সরে আসে। কারণ জনগণ তার ডাকে সাড়া দেয়নি।

এরপর আমরা দেখি ১/১১ এর সময়ে ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বে কিংস পার্টি গঠিত হয়। এর পেছনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল আমাদের সুশীলরা। সাম্প্রতিক সময়ে আবার একটি নতুন রাজনৈতিক দলের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে এবং নীরবে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেছেন যে, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিচ্ছেন। তবে নুর রাজনৈতিক দলের কেবল একটা মানুষ মাত্র এর পেছনে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ রয়েছে, যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে রাজনৈতিক একটি তৃতীয় ধারা তৈরি করতে চান।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে, নতুন রাজনৈতিক দলটি কেবল নুর বা ড. জাফরুল্লাহ নয়, আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কে নিয়ে একটি নতুন খিচুড়ি তৈরির চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। এই রাজনৈতিক দলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ কে এই দলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে শেষ পর্যন্ত তিনি থাকবেন কি না- তা নিশ্চিত নয়। বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত আব্দুল হাফিজ কেও এই দলে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, কর্নেল অলি আহমেদকে এই দলে রাখার জন্য কথা বলা হচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ থেকে যারা মুক্ত চিন্তা করেন এবং যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির মুল নেতৃত্বের সঙ্গে অস্বস্তি প্রকাশ করেন তাদেরকে দিয়েই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মেরুকরণের চেষ্টা করছে। তবে এই উদ্যোগ শেষপর্যন্ত সফল হবে কি না- তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। আর এই রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্যই সাম্প্রতিক সময়ে গনস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ এবং ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুর মধ্যবর্তী নির্বাচন সহ নানা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখছেন।

একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ বেশ কিছু নেতা এখন দলের নেতৃত্ব নিয়ে হতাশ প্রকাশ করেছেন। বিএনপিকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপার নিয়েও বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশ্নেও বিএনপির মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দের কারণে ভোটাররা বিএনপির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

সেজন্য বিএনপির একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন। জামাত থেকে যে দলটি বেরিয়ে গেছে তাদের সঙ্গেও নুরের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরকেও এই দলে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি, যারা বড় রাজনৈতিক দলের নেতা নন, কিন্তু এককভাবে আলোচিত এ রকম কয়েকজনকে নতুন রাজনৈতিক দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে সুশীলরা রাজনৈতিক দল করে রাজনীতিতে ‘তৃতীয় ধারা’র সৃষ্টির চেষ্টা করেন। প্রতিবারই তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হন। এবার তাদের পরিণতি কি হয়- সেটাই দেখার বিষয়।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin