আবার নিরপেক্ষ সরকারের ফর্মূলা

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। গত এক সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট সহ উর্ধ্বতন কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক মেরুকরনের লক্ষ্যে দূতাবাস কাজ করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগের দিন মার্কিন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংগে সাক্ষাৎ করেন।

নির্বাচনের পরদিনও ঐ দুই কর্মকর্তা গুলশানের একটি রেস্তোরায় বৈঠক করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। গত বুধবার মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের ল’ চেম্বারে গিয়ে একান্ত বৈঠক করেন।

একই দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট দেখা করেন, বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. বদরুজ্জোদা চৌধুরীর সঙ্গে। গত শনিবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সংগে বারিধারায় আমেরিকান ক্লাবে চা চক্রে মিলিত হন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত যাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাদের মধ্যে ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রমুখ। পরদিন রোববার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যরিষ্টার মঈনুল হোসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অর্থবহ হয় সেলক্ষ্যে মার্কিন দূতাবাস উদ্যোগ নিয়েছে। ঐ সূত্র মতে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ম্যান্ডেট নিয়েই দূতাবাস কাজ করছে। মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যারা বৈঠক করেছেন, তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বাঁধাগুলো চিহ্নিত করার জন্যই বিভিন্ন সংলাপ করছে।

তারা নির্বাচনে ‘সরকার এবং প্রশাসন’ কি ধরনের প্রভাব বিস্তার  করছে সে সম্পর্কে জানতে চাইছেন। একই সঙ্গে মার্কিন দূতাবাস, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাদের প্রস্তাব এবং পরামর্শও শুনতে চাইছেন। একাধিক সূত্র বলছে, যারা মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।

এজন্য তারা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতাদেশগুলোকে চাপ সৃষ্টির আহবান জানিয়েছেন। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মার্কিন দূতাবাস বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় কীভাবে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা যায়, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়।

এ ব্যাপারে একটি ফর্মুলাও তিনি মার্কিন দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ঐ ফর্মুলায়, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে সরকার পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হবার পর প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙ্গে দেবেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করবেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁকে নির্বাচনকালীন সময় দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন করে আমন্ত্রণ জানাবেন না। এর পরিবর্তে তিনি সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করবেন। যে উপদেষ্টামণ্ডলী নির্বাচনকালীন সময়ে রুটিন দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করবে। একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো চাইছে, অন্তত নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে শেখ হাসিনার সরে যাওয়া। এটুক হলেও অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বলে তারা মনে করছে।

তবেঁ, আওয়ামীলীগ এসব প্রস্তাব এবং উদ্যোগকে ‘উদ্ভট’ এবং হাস্যকর বলেই মনে করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকেই, আমাদের সংবিধানের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই’।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin