bnp-flag

আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে সরগরম থাকবে ২০১৮ সাল। বিএনপি বলছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি মানা না হলে আবারো আন্দোলনের পথেই হাঁটবেন তারা।তবে নির্বাচনকালীন নতুন কোনো নিরপেক্ষ সরকারের ধারণা আবারও উড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে।নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, কিভাবে এবং কাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে, নির্বাচনের সময় সংসদ থাকবে না-কি ভেঙ্গে দেয়া হবে, এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কি-না, হলে কিভাবে হবে এসব বিষয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করার উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমাদের দাবি পরিষ্কার। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, পার্লামেন্ট বহাল রেখে নির্বাচন হতে পারে না। একটি সংসদ থাকবে, সংসদ সদস্যরা সরকারি প্রটোকল নিয়ে নির্বাচন করবে।

আর একজন সাধারণ মানুষ তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, মন্ত্রীরা মন্ত্রী থাকবে, এটা কখনো সমতল ভূমি হতে পারে না।’বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ৪টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে সময়কার ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর অধীনে। যার ৩টিই ছিলো সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচনটি করে সব দলের ঐকমত্যে গঠিত একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

১৯৯৬ সাল থেকে পরপর ৩টি নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ২০১১ সালে সংবিধানে সংশোধনী এনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধানে ফিরে যায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সে নির্বাচন বর্জন করার পর এখন বিভিন্ন মহল থেকে সব দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ আছে সরকারের উপর।

এমন প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, তা নিয়ে সরকারের অবস্থানে কোন পরিবর্তন এসেছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যেই যে নির্বাচন হবে, বর্তমান সরকার সেই নির্বাচনকালীন সময়ে ক্ষমতায় থাকবে।

তারা দৈনন্দিন কাজ করবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করবে, যেরকম অন্যান্য দেশেও হয়। এখানে যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে আমাদের তো কিছু করার নেই। নির্বাচন হবেই এবং সেই নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। এর বাইরে ক্ষমতাসীন দল বা আমাদের জোট যাবে না।’

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ আন্দোলনের নানা কর্মসূচি দিয়েছিলো বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। দাবি পূরণ না হলে এবারো দলটির নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আন্দোলনের কথাই বলছেন। তবে এবার তত্ত্বাবধায়কের বদলে সহায়ক সরকারের কথা বলছেন দলটির নেতারা। কিন্তু এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোন রূপরেখা এখনো ঘোষণা করেনি বিএনপি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি নাম বলেছি যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ একটি সহায়ক সরকার। যে নামেই হোক না কেন, মূল কথাটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। এই সরকারের রূপরেখা আমরা দেব, আমাদের নেত্রী উপযুক্ত সময়ে এই রূপরেখা দেবেন। সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা এই রূপরেখা নিয়ে জনগণের কাছে যাবো এবং এই জনগণকে নিয়েই আমরা আগামি নির্বাচনের সময় পর্যন্ত থাকতে চাই।

যদি সরকার ২০১৪ সালের পথে হাটে তাহলে জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের ভোটের অধিকার আদায় করবে।’রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। এদের মধ্যে রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক বলছিলেন, ‘কী করা উচিত, তা সবপক্ষই জানে। আশা করি এবার সব দলই এটা ভাববে।’

রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন এক নারী। তিনি বললেন, ‘গতবার যা হয়েছে, তাতে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। দলে দলে যে বিবাদ, সেটা যেন এবার না থাকে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট চাই।’এমন অবস্থায় দুই দল তাদের বর্তমান অবস্থানেই অনড় থাকবে নাকি নতুন কোন অবস্থানে যাবে, আশা করা যায় তা স্পষ্ট হতে শুরু করবে আসছে দিনগুলোতে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মতবিরোধের দৃষ্টান্ত যেমন আছে, তেমনি ঐকমত্যের উদাহরণও আছে। প্রধান দুই দল আলোচনায় বসলে চলমান বিরোধেরও নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড রওনক জাহান।”আমাদের দেশে যখনই কেউ বিরোধী দলে থাকে, তার সামনে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। অতএব এবার সেগুলোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হবে সেগুলো বলতে হবে।

শান্তিপূর্ণভাবে যেন নির্বাচন হয়, সবাই যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হবে সেগুলো যদি সবার কাছে প্রতীয়মান হয় তাহলে তো আর অত সমস্যা থাকে না। আমার মনে হয় এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।’তবে আলোচনা-সমঝোতা নিয়ে এখনো বিপরীত মেরুতে প্রধান দুই দল। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছিলেন, ‘আমরা যদি সমঝোতায় আসতে পারি তাহলে সংবিধান এখানে কোনো বাঁধা না।

আমরা যে কোন সময় আলোচনা করতে প্রস্তুত।’তবে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বললেন, ‘আলোচনা করবো কি জন্য ? তারা এসে আলোচনার টেবিলে বলবে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিন। আমরা বলছি যে, না এটা সম্ভব না। তারা বলবে সহায়ক সরকার দিন। সহায়ক সরকার নিয়ে পৃথিবীতে কোন দৃষ্টান্ত আমরা দেখি নাই। সংবিধান আছে, সংবিধানে যা আছে তার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে।’

dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin