আন্দোলনে নামছে বিএনপি হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার

বিএনপি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে সেপ্টেম্বর থেকেই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই তাঁকে নিয়ে তারা নির্বাচনে যাবেন। অন্যদিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীরা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তারা বলছেন, আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা বা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যখন আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার তখন হার্ডলাইন নিয়েছে।

সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু ধৈর্য দেখানো প্রয়োজন তা দেখাবে, আবার প্রয়োজনে হার্ডলাইনেও থাকবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এবার যা যা করণীয় তাই করা হবে। বিএনপির আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র পরাস্ত করবে সরকার। সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলের নেতারা মনে করছেন, দ্রুতই মুক্তি পাবেন তিনি। তা না হলে সেপ্টেম্বর থেকেই মুক্তি আন্দোলনে ‘এক দফা’ দাবি নিয়ে রাজপথে নামবে বিএনপি। এতে হরতাল-অবরোধ, গণজমায়েত, মানবপ্রাচীর, বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন তারা। খালেদা জিয়ার মুক্তির এই আন্দোলনকে শেষ রূপ দেওয়া হবে নির্বাচনী আন্দোলন হিসেবে।

সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। এদিকে ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউন করতে চায় বিএনপি। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয়

কার্যালয়ের সামনে জনসভার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে ডিএমপিতে। বিএনপিসূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ২০-দলীয় জোট ছাড়াও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চান তারা।

এজন্য ২০-দলীয় জোট ছাড়াও যুক্তফ্রন্ট, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি বাম সংগঠনের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যদি আন্দোলনে তাদের সাড়া পাওয়া যায় তাহলে সংসদ নির্বাচনে তাদের জন্য বিএনপি বিশাল একটি ছাড় দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

এদিকে জোট গঠন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সতর্ক রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোট গঠন করে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্য তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি নেতাদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘জোট গঠনের নামে কোনো ধরনের আন্দোলন করলে বরদাশত করা হবে না।

নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। আমরা আশা করব সেই নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে। কেউ যদি নির্বাচনে না আসে আমাদের কিছু করার নেই।’ তিনি বলেন, ‘খবরের কাগজে দেখলাম আমাদের বিরুদ্ধে জোট গঠন করা হবে। জোট করে তারা আন্দোলন করবেন। ভালো কথা। গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে।

কিন্তু আন্দোলনের নামে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ২০১৩, ’১৪, ’১৫-এর মতো হরতাল-অবরোধের নামে অর্থনীতিকে ধ্বংসের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।’ বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই মাঠ গরমের চেষ্টা চালানো হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া না হলে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কার্যত এ বিক্ষোভের মাধ্যমেই নতুনভাবে রাজপথমুখী হবে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দলের চেয়ারপাসরন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই আমাদের এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য।

তাঁর নেতৃত্বেই আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চাই। তবে সেই নির্বাচনে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সাত দিন আগে নির্বাচনী মাঠে নামাতে হবে। সব রাজবন্দীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

নইলে আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের দাবি আদায় করা হবে।’ সূত্রমতে, বিএনপি রাজপথে আন্দোলনের পরিকল্পনার পাশাপাশি কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানোর চেষ্টা করছেন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু ভোট হবে না, যা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হয়নি।

তারা এ বিষয়ে সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার। এজন্য বিএনপিকে রাজপথে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে দেবে না আওয়ামী লীগ।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু ধৈর্য দেখানো প্রয়োজন তা দেখাবে, আবার প্রয়োজনে হার্ডলাইনেও থাকবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এবার যা যা করণীয় তাই করা হবে। বিএনপির আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র পরাস্ত করবে সরকার। সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার ও দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি কোথায় গোপন বৈঠক করছে, কোথায় ষড়যন্ত্র করছে সব তথ্য সরকারের কাছে আছে। তারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে। কিন্তু তারা সফল হবে না।

বিএনপির যে কোনো আন্দোলন মোকাবিলা করার সাংগঠনিক শক্তি আমাদের আছে। তারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য করলে সরকার যা যা করণীয় তাই করবে।’ সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী অক্টোবরে গঠিত হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। সে সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তাদের। আওয়ামী লীগের ঘোষণা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে আগামী মাসেই ঘোষণা করা হতে পারে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়।

এ রায় ঘিরে ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতারা আশঙ্কা করছেন তাদের দলের নেতাদের দণ্ড হতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নতুন করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দলটির ধারণা, এ মামলায় বিএনপি নেতাদের শাস্তি নিশ্চিত।

শাস্তি হলে বিএনপি নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি মামলায় কারান্তরিন রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে মত রয়েছে বিএনপির একটি পক্ষের। আর আইনি প্রক্রিয়ায় সহসাই খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা নেই— এমন ধারণা দলটির নেতাদের।

এজন্য আন্দোলনই একমাত্র পথ মনে করছেন তারা। সব মিলে সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার মনোভাব তাদের। আর আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কঠোর হাতে দমন করবে সরকার।

উৎসঃ   বিডি প্রতিদিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin