khaleda-hasina

আন্তর্জাতিক মহল সেদিন হাসিনাকে যা বলেছেন, আর আজ খালেদা কে যা বলছেন – দেখুন বিস্তারিত

তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা যখন নব্বইত্তোর সংসদীয় গণতন্ত্রের নবযাত্রায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সংসদ বর্জন, পদত্যাগ ও তীব্র গণআন্দোলন শুরু করেছিলেন তখন আন্তর্জাতিক মহল তাকে সংলাপে সমাধানের তাগিদ দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু আমলে নিয়েই পশ্চিমাসহ গণতান্ত্রিক দুনিয়া সংলাপে সমাধান করতে বলেছিলেন।

এবার আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলছেন তখন পশ্চিমা দুনিয়াসহ গণতান্ত্রিক দেশ তাকে নির্বাচনে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। আর সরকারকে বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তারা চান।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার এক তরফা একদলীয় র্নিবাচন করলেও ১৫ দিনের বেশি সেই সংসদ টিকেনি। রাতভর সংসদ অধিবেশন চালিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে সংবিধানের ঠাঁই দিয়েছিল ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জনতার মঞ্চ ও সকল বিরোধী দলের একযোগে পরিচালিত আন্দোলন ও গণঅভ্যত্থানের মুখে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড এন মেরিলের নেপথ্য মধ্যস্থতায় দাবি মেনে পদত্যাগ করে জুনের নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে অংশ নিতে হয়েছিল।

সেই থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন পরাজিত শক্তির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। সেই নির্বাচনগুলো হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দুটো সংসদেই শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। যদিও সেই সব সংসদে সংসদ বর্জন রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতির কম্পন অনুভূত হয়েছে নিয়ত রাজনীতিতে।

কার্যত ১৯৯১ সহ তিনটি জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়েছে।
চারটি নির্বাচনের একবার বিএনপি আরেকবার আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিএনপি জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন ও আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি এবং জাসদ রবের সমর্থনে সরকার গঠন করেছিল।

২০০১ সালে বিএনপি চারদলীয় জোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে আর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ মহাজোট নিয়ে ক্ষমতায় বসে। ২০০৬ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট আবারো গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। সেসময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি জোট সরকার বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুবছর বাড়িয়ে দেয়।

এতে করে বিএনপির এক সময়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বিচারপতি কেএম হাসান উঠে আসেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আন্দোলন, প্রতিরোধ ও বিতর্কের মুখে বিচারপতি কেএম হাসান সরে দাঁড়ালেও বিএনপি তাদের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনের হাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব তুলে দেয়।

একটি একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ হাঁটে বিএনপি জোট। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সহিংস হরতাল অবরোধে নির্বাচন বাতিল হয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। সেই ইতিহাস সবার জানা।

দুই নেত্রী কারামুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভোট মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায়ই আসেনি সংবিধান থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তি ঘটায় বিচারপতি খাইরুল হকের রায়ের প্রেক্ষিতে।

এতে বিএনপি জোট হরতাল অবরোধসহ সহিংস কর্মসূচি নিলেও, ভোট বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার তা আমলে নেয়নি। একতরফা প্রশ্নবিদ্ধ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হজম করে বসে। সেই সরকারের এক বছরের মাথায় বিএনপি ফের হরতাল অবরোধ ও সহিংস কর্মসূচির পথ নিলেও লাভবান হয়নি। ফসল গড়ে তোলার বদলে মামলা মোকদ্দমায় আর জেলের দহনে সাংগঠনিক শক্তিক্ষয় ঘটে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে বিএনপি এখন আগামী জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সহায়ক সরকারের দাবি তুলেছে। যদিও বলা হচ্ছে, এটা হচ্ছে রাজনৈতিক কৌশলগত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি মাত্র। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

গণতন্ত্রের নবযাত্রায় শেখ হাসিনার দাবির মুখে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সংবিধান থেকে এক চুল নড়বেন না।কিন্তু গণআন্দোলন ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পুরোটাই সরতে বাধ্য করেছিল।

আওয়ামী লীগও বলে আসছে, বিএনপির দাবির মুখে সংবিধান থেকে এক চুল সরবে না এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরেনি এখনো সরবে বলে মনে হচ্ছে না। সেই সময়ে আন্তর্জাতিক মহল সংলাপে সমাধানের তাগিদই দেননি কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন এসে দুই দলকে আলোচনায় বসালেও ফলাফল মিলেনি।

ফলাফল ঘরে তুলেছে আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থানের মুখে।বিএনপিকে এখন আন্তর্জাতিক মহল বলছে, নির্বাচনে যেতে। বিএনপিও গণঅভ্যুত্থান দূরে থাক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতিই নিচ্ছে। এতে করে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, সকল দলের অংশগ্রহণে ভোটযুদ্ধের পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin