al_photo

আটঘাট বেঁধে মাঠে আ.লীগ

জোরেশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি-এই তিনেই সব মনোযোগ দলটির। অক্টোবরের মধ্যেই এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় তারা। এ জন্য অক্টোবর পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একগুচ্ছ কর্মসূচি সামনে নিয়ে এগোচ্ছে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, প্রার্থী তালিকা মোটামুটি চূড়ান্তই আছে। তবে তা তফসিল ঘোষণার আগে প্রকাশ করা হবে না। তবে যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে, সেগুলোতে বিকল্প প্রার্থীকে তফসিল ঘোষণার আগেই সবুজ সংকেত দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একটি বৈঠক আগামী সপ্তাহে হতে পারে। সেখান থেকেই ইশতেহার তৈরির জন্য একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। আর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৭ ডিসেম্বর। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ছোট মন্ত্রিসভায় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর প্রতিনিধি থাকবে। অর্থাৎ বিএনপির সুযোগ থাকছে না।

তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার এত তাড়াতাড়ি গঠন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হয়ে গেলে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা শেষ সময় পর্যন্ত এই সুযোগটা নিতে চান। এ জন্য অক্টোবরের মাঝামাঝি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন তা আরও গতি পেয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ‘ফাইন টিউনিং’-এর কাজ চলবে।

সংবিধান অনুসারে, ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটের সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ-এসব বিষয় আওয়ামী লীগের বিবেচনাতে আর নেই। ওই সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক কোটা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে তরুণ সমাজে আওয়ামী লীগের বিষয়ে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।

ইশতেহারে তরুণদের উৎসাহিত করার বিষয়টি জোর দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি আনতে সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে শেয়ারবাজারের ওপর। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গুছিয়ে আনা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নানাভাবে প্রচারের চেষ্টা চলছে।

নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একগুচ্ছ সাংগঠনিক কর্মসূচি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার গণভবনে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে। এই বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংগঠনিক প্রতিবেদন সংগ্রহ এবং সেই অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কোথায় দলে কোন্দল আছে, তা খুঁজে বের করে সুপারিশ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আজকের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

কাল শুক্রবার সব জেলা নেতাদের গণভবনে ডাকা হয়েছে। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে জেলা নেতাদের নির্বাচনী নির্দেশনাও দেওয়া হতে পারে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, দলকে নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে নানা তৎপরতা চলছে, এটাই স্বাভাবিক।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আগামী সপ্তাহে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিরও বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এবং কো-চেয়ারম্যান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম। কেন্দ্রীয় কমিটির সব নেতা এর সদস্য।

এই বৈঠক থেকে ইশতেহার তৈরি, প্রচার-প্রচারণাসহ নানা দায়িত্ব পালনের জন্য উপকমিটি গঠন করা হতে পারে। নির্বাচনের মূল সুর বেঁধে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। সেখান থেকে ফেরার পর পুনরায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শনিবার ট্রেনে করে উত্তরবঙ্গে নির্বাচনী সফরে যাবেন। এর মধ্যে ১২ লাখ পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin