sinha_02

অনেক ‘সিনহা’ সরকারের ভেতরে!

বঙ্গভবনে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। মহামান্য রাষ্ট্রপতি অভ্যাগতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। এর মধ্যে এলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেই তিনি রাষ্ট্রপতির পাশেই দাঁড়ালেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি বুঝতে পারেননি, মনে করেছিলেন, বিচারপতি বোধ হয় কিছু বলবেন। পরে রাষ্ট্রপতির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই হোস্ট হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বঙ্গভবনের দরবার হলের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে গেল। রাষ্ট্রপতি সিনহাকে বললেন, আপনি বসুন পরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। পরে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সিনহাকে সরিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে বিচারপতি সিনহার বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে এই ঘটনাটি উদাহরণ টেনেছিলেন।

প্রধান বিচারপতি হবার পর আস্তে আস্তে বদলে গিয়েছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। নিজেকে এমনভবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন যে, তিনিই সব পারেন। আর এটা অনুভব করে তিনি সরকারের প্রতিপক্ষ হয়েছিলেন। বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারীরা মনে করছেন সরকারের ভেতর এখনো অনেক সিনহা রয়ে গেছে। এদের চোখ উল্টানো শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এই সব সিনহাদের সংখ্যা আমলাতন্ত্রের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। নির্বাচনের একবছর আগে হঠাৎ সচিবালয়ে ‘নিরপেক্ষতা’র ধুম লেগেছে। যাদের উপ-সচিব কিংবা যুগ্ম সচিব পর্যন্ত পদোন্নতি পাবার কথা ছিল, তারাই এখন সচিব হয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন। সরকারি কাজ, অগ্রগতি প্রকল্পগুলোতে বাধা সৃষ্টি করছেন। গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উঠেছে। শুধু সচিব কেন, সচিবালয়েই এখন সরকারের সমালোচকের সংখ্যা বেশি। এই সরকার এসে পদের প্রায় তিনগুণ অতিরিক্ত সচিব করেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব করে সরকার যেন মহা অন্যায় করেছে। সচিব হতে না পারার দুঃখে তাঁরা সরকারের কাজেই বাধাগ্রস্থ করছেন। একজন সচিব দুঃখ করে বলছিলেন, ‘এই সরকার পে স্কেল দিল, এত প্রমোশন দিলো অথচ দেখেন কালকে যদি বিএনপি বলে আমরা নির্বাচনে যাব, সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক আমলা জিয়ার সৈনিক হয়ে যাবে।‘

পুলিশের মধ্যেও সিনহা আছে। বিভিন্ন স্থানে তাঁরা এখন বিএনপি জামাতের সঙ্গে খাতির জমানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছে। চিহ্নিত আসামি জামাতের কর্মী হলে ধরা হচ্ছে না, আবার কোনো অপকর্ম হলেই সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ খোঁজা হচ্ছে। কোনো কালে ছাত্রলীগ করেছিল কিংবা ছাত্রলীগের কোনো মিছিলে অংশ নিয়েছিল- তাঁকেই ছাত্রলীগের বা যুবলীগের নেতা বানিয়ে গণমাধ্যমে খবর পাঠানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এটাকে সিনহা সিনড্রোম হিসেবে দেখছেন।

শুধু আমলা, মাঠ প্রশাসন, পুলিশ নয়, সিনহা সিনড্রোমে ভুগছেন অনেক রাজনীতিবিদরাও। যাঁরা এখন সরকারের সমালোচনা করে বাহবা কুঁড়াতে চাইছেন। হঠাৎ করে হাওয়া বদল হচ্ছে। তবে এটাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে এরকম কিছু বিশ্বাসঘাতক সবসময়ই তৈরি হয়। তবে জরুরি হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সিনহাদের বিরুদ্ধে একটা শুদ্ধি অভিযান।

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

রাজপথে সর‌ব হচ্ছে বিএনপি! আসছে নানা কর্মসূচি

দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত ১২ নভেম্বর বড় কোনো জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসভার ভাষণে তিনি সরকারের বিভন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা ছাড়াও নির্বাচনমুখী বক্তব্যও দিয়েছেন।

এ জনসভার মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরে এসেছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে আবারো সরব হওয়ার চেষ্টা করছে দলটির নেতাকর্মীরা।

কয়েকদিন আগেও বিএনপির কর্মসূচি ছিল বক্তব্য-বিবৃতি নির্ভর। তবে ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। বিশেষ করে চেয়ারপারসনের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য লক্ষণীয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বের খালেদা জিয়া দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর করে অভ্যর্থনা জানায়। বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক জনসমাগম ঘটিয়েছে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে কক্সবাজ‍ার সফরেও। সেখানেও যারা দলের পক্ষে মনোনয়ন পেতে মুখিয়ে আছেন সেসব নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সড়কের দু’পাশে কর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে।

কক্সবাজার থেকে ফিরে ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দীতে জনসভা করেছে বিএনপি। জনসভাকে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসেবে অবিহিত করেছেন দলটির নেতারা।

দলীয় চেয়ারপাসনের কক্সবাজার সফর ও ঢাকার জনসভার পর বেশ উজ্জ্বীবি হয়ে উঠেছে দলের নেতাকর্মীরা। আর শীর্ষ থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে নতুন করে নানা কর্মসূচি আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন একাধিক সিনিয়র নেতা।

মানবিক কারণে কক্সবাজার সফর জানিয়ে সড়ক পথে ঢাকা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার সফর করেছিলেন খালেদা জিয়া। এই সফরকে বিএনপি একান্ত মানবিক সফর বলে আসছিলেন। যদিও এটা মানবিক, তবুও এটা ছিল দলের ক্যাম্পেইন।

একইভাবে নভেম্বরের শেষভাগে রংপুর অঞ্চল এবং ডিসেম্বরে সিলেট অঞ্চলে সফর করার চিন্তাও করা হচ্ছে। বিশেষ করে বন্যা ও পাহাড়ি

ঢলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে সড়ক পথে বিএনপির চেয়ারপারসন সিলেট যেতে পারেন বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

চলতি বছরের এপ্রিলে পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বেশ কিছু এলাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নষ্ট হয় ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠ। অপরদিকে, বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তরাঞ্চলের ১৫টি জেলা। তখন দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র নেতারা সহায়তার জন্য সফর করেছিলেন। তবে এই সফরের আগে তিনি বগুড়ায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলেও জানা গেছে।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সফরকালে তিনি দলের নেতাকর্মীদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রংপুর ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নির্দেশনা দেবেন।

১২ নভেম্বরের জনসভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার উঠে আসে। সেখানে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তিনি ও তার দল অংশ নিবে না এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন করবে।

চেয়ারপারসনের সফর নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া জনগণকে ভালোবাসেন। তিনি যেহেতু জনগণের নেত্রী সেহেতু জনগণের সুখ-দুঃখে তিনিই পাশে যাবেন। যদি তার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে অবশ্যই বন্যাদুর্গত এলাকায় সফর করবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দেখতে যাবেন।

তিনি ‍আরও বলেন, খালেদা জিয়া যেহেতু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব,

তিনি যেখানে সফর করবেন সেটাও রাজনীতির অংশ। আগামী দিনের সব কর্মকাণ্ড দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

দলের চেয়ারপারসনের সফর নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডামের সফর নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সম্ভাবনা রয়েছে।

একই বিষয়ে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন কাছে জানতে চাইলে তিনিও একই কথা বলেন। তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হলে আমরা জানাবো।

উৎসঃ  বাংলানিউজ

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin