অনিয়মের লেটেস্ট মডেল গাজীপুর

খুলনার মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ হলেও অন্তরালে অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতি হয়েছে সীমাহীন। তাই অনেকে বলেছেন গাজীপুরে জালিয়াতির স্টাইল খুলনাকে হার মানিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

শুরুর দিকে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক মনে হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দুপুরের পর থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই আসতে থাকে অনিয়মের নানা খবর।

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা জালভোট দিতে এলে তাদের নিবৃত্ত না করে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পোশাকি সদস্যদের চেয়ে সাদা পোশাকের সদস্যরাই ছিল অপকর্মের সহযোগিতায় বেশি তৎপর।

তাদের যোগসাজশে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের। কোনো কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টরা ঢুকতেই পারেনি। কেন্দ্রের গেট থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ মিলেছে।

আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর নানকও ভোট চলাকালীন এক সংবাদ সম্মেলনে পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন বহু কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না। তবে তিনি এ জন্য বিএনপির দলীয় কোন্দলকে কারণ দেখিয়েছেন। অনেক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রাত ২টায় ৩২৮ টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৩২৬১৬১ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার পেয়েছেন ১৬০৫৩০ ভোট। তবে ঐ সময় পর্যন্ত সরকারি ফলাফল অনুযায়ী ২০৫টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১৮০৯৩৪ ও বিএনপি প্রার্থী ৯৯৪৭৮ ভোট পেয়েছেন।

আড়াই ঘণ্টায় ব্যালট শেষ : ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে গাসিক ১৭নং ওয়ার্ডের মুগর খাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার। সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নৌকা মার্কার লোকজন।
ভোটগ্রহণের কিছু সময় পরেই ওই কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেন নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। পরে তারা ব্যালট নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারেন।

এ কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর একজন পোলিং এজেন্ট অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ৯টায় ইসমাইল হাজী, মাইনুদ্দিনসহ আরো একজন ভোটকেন্দ্রে এসে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক সিল ছাপ্পড় মারে যেখানে প্রিজাইডিং অফিসারের কোনো স্বার নেই। এমতাবস্থায় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাই।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, ভোটকেন্দ্রে আবার নতুন ব্যালট পেপার এনে ভোট নেয়া শুরু হয়েছে। কিছু সময় ভোটগ্রহণ থেমে ছিল।
ভোটকেন্দ্রের গেটে তালা দিয়ে নৌকায় সিল : দুপুর সাড়ে ১২টায় ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জা ইব্রাহীম মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে এক যুবককে ৮টা ব্যালট হাতে ভোট দিতে দেখা যায়। এ সময় সাংবাদিকরা তার হাতে এতগুলো ব্যালট কেন জানতে চাইলে ওই যুবক বলেন, বয়স্ক মানুষকে সাহায্য করছেন। এরপর পেছন থেকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এসে সাংবাদিকদের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কে নিয়ে যান।

সাথে ছিলেন পুলিশের এসআই আসিফ। প্রিজাইডিং অফিসার হারুন উর রশীদ সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বলেন, এ কেন্দ্রে সকাল থেকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। সাংবাদিকরা ওই যুবকের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, মাত্র অভিযোগটি পেলাম। আর কোনো অভিযোগ পাইনি। ১২টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রের বাইরে কৃত্রিম গোলযোগ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রের সমর্থকেরা।

এ সময় ভোটারদের বের করে দিয়ে পুলিশ বিদ্যালয়ের গেট লাগিয়ে দেয়। বাইরে থেকে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকেরা গেটে ধাক্কা দিতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র উঁচিয়ে তাদের সরে যেতে বলে। ঘটনার সময় কেন্দ্রের বুথগুলো থেকে নৌকার ব্যাজধারী প্রায় অর্ধশত যুবক বের হয়ে আসে। এরপর এসআই আসিফের মোবাইল নিয়ে এসে প্রিজাইডিং অফিসারকে কথা বলতে বলেন।

প্রিজাইডিং অফিসার মোবাইলের অপর পাশে থাকা ব্যক্তিকে জানান, তার কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ৩৪০০। সকাল থেকে ভোট দিয়েছেন ৯৪৪ জন। তখন মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে ১২০০ ভোট কাস্ট করার কথা জানানো হয় প্রিজাইডিং অফিসারকে। পরে ওই কে নৌকার ব্যাজধারী চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি প্রবেশ করে বলেন, মেয়র সাহেব বলেছেন, এটা নিয়ে নাও। এ ঘোষণায় বুথগুলো থেকে বেরিয়ে আসা পুরুষেরা আবার বুথে ফিরে যান এবং জালভোট দিতে থাকেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। কোনো জালভোট হচ্ছে না। ভোটাররা তো বাইরে, বিদ্যালয়ের গেট বন্ধ তাহলে কিভাবে তারা ভোট দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেতরে যারা আছেন তারা ভোট দিচ্ছেন। পরে ১টায় ওই কেন্দ্র থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়া হয়। এ দিকে এ কেন্দ্রে ঝামেলার সময় পাশের পুরুষ কেন্দ্র মাহিরা উচ্চবিদ্যালয় দখলে নেয় আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা।

নৌকায় সিল মারা ব্যালট সরবরাহ : ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জা ইব্রাহীম মেমোরিয়াল স্কুল ভোটকেন্দ্রের একটি বুথে ভোট শুরুর আগেই নৌকার সমর্থকেরা ব্যালটের একটি বইয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে রাখে। পরে ভোটাররা ভোট দিতে এলে তাদের সিল মারা ব্যালট দেয়া হয়।

দুপুর ১২টায় ওই কেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের লম্বা লাইন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর একটি বুথে ভোট দিতে ঢুকেন এক তরুণী। তিনি জানান, যথারীতি তাকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যালট পেপার দেয়া হয়। মেয়র প্রার্থীর ব্যালট নিতে গেলে সেখানে থাকা কয়েকজন জানায়, ‘মেয়রের ভোট দেয়া লাগবে না। এ ভোট তারা নিজেরাই দিয়ে দিচ্ছে।’

তাকে আরো জানানো হয়, তার ব্যালটে সিলমারা হয়ে গেছে। পরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বের হয়ে আসেন প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাওয়া এ তরুণী।

তিনি আরো জানান, ওই স্কুলের দোতলার কগুলোতে জাল ভোটের কারবার চলছে। তারা মেয়র প্রার্থীর ব্যালটে আগে থেকেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে রেখেছে। কোনো ভোটার গেলে তাকে দু’টি ব্যালট পেপার দিচ্ছে। মেয়রের ভোট তারাই দিচ্ছে। একই ওয়ার্ডে পাশের হাজী আবদুল লতিফ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা দেখা গেছে।

বেলা দেড়টায় জানা যায়, এ কেন্দ্রটিতে নৌকার পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীক ঠেলাগাড়িতেও সিল মারা রয়েছে। সেখানে শুধু একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকেই ভোট দিতে পেরেছেন ভোটাররা।

ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল : শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকেরা জোর করে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রের সামনে বিােভ করে বিএনপি-সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নুর সমর্থকেরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তাদের ধাওয়া- পাল্টাধাওয়া হয়।

ওই কেন্দ্রের ২০১ নম্বর বুথের ভোটার মীর মোহাম্মদ মোফাজ্জল (৩৩০৬৩৪১৮৭৭৮৬) বলেন, আমি বুথে প্রবেশ করার পরে ৭-৮ জন লোক এসে আমার কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তারা বুথে থাকা অন্য ব্যালট নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে।

ঘটনার পর ওই বুথে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা মেয়র প্রার্থীর ব্যালটের মূল বই শেষ। অপর দিকে কাউন্সিলর এবং সংরতি নারী আসনের ব্যালট গিয়েছে অর্ধেক। ওই কেন্দ্রের ৬টি বুথে বিএনপির কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি।

সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ২০৩ নম্বর কে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যালট শেষ। তবে নারী কাউন্সিলরের ব্যালট শেষ হয় ৮১টা। ওই বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জানান, তাদের চার পাশ ঘিরে ধরে আধ ঘণ্টা ভোট কেটে নেয়া হয়। পাশের বুথ ২০৫ নম্বরেও একই ঘটনা ঘটে। এই বুথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট শাহীন রেজা নিজেও তার প্রার্থীর পে ব্যালটে সিল মারেন।

সামনাসামনি এ অভিযোগ করেন নৌকার এজেন্ট মো: মিজানুর রহমান লিটন এবং অপর কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট আব্দুল করিম। ২০৬ নম্বর বুথে দেখা গেছে, মেয়র প্রার্থীর ব্যালট ১০৬টা ব্যবহার হলেও কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যালট গেছে ৯১টি।

এসব বিষয়ে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মিয়া বলেন, আমরা অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখছি। এটা প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। প্রিজাইডিং অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে সমস্যা জেনে নিচ্ছি। কিছু লোক জাল ভোট দিতে এসেছিল, পোলিং এজেন্টরা তাদের চিহ্নিত করার পর একটু সমস্যা হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নেবো।

একই ঘটনা জয়দেবপুর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা কেন্দ্রেও। জোর করে ঢুকে নৌকার পে সিল মারে ২০ থেকে ৩০ জন যুবক। এ ঘটনায় সেখানে আধ ঘণ্টার মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।

ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জানান, ২০ থেকে ৩০ জন যুবক অতর্কিতে কেন্দ্রের তিনতলার একটি বুথে ঢুকে তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। এরপর দ্রুত নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। কোনোভাবেই তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। এ ঘটনায় আধ ঘণ্টার মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখতে হয়। ঘটনাটি প্রিজাইডিং অফিসারকে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার আজহারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি রিটার্নিং অফিসারকে জানানো হয়েছে। তিনি ভোট চালু রাখতে বলেছেন। পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।

৯ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত : ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে জালিয়াতির ঘটনায় ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলোÑ খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (নং-৩৭২), খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (নং ৩৭৩), হাজী পিয়ার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র (নং-৩৮১), জাহান পাবলিক দত্তপাড়া টঙ্গী কেন্দ্র (নং-৩৪২), ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র (নং-৯৮), কুনিয়া হাজী আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (নং-২৪৩), কুনিয়া হাজী আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (নং-২৪৪), মেশিন টুলস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (নং-১৬১) এবং বিন্দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূবাইল কেন্দ্র (নং ২৭৪)।

সহকারী রিটার্নিং অফিসার তারিফুজ্জামান এ প্রসঙ্গে জানান, কেন্দ্রগুলোর সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ইসির সাথে পরামর্শ করে বিধি মোতাবেক ভোট গ্রহণ স্থগিত করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে তালিকা পাঠিয়েছেন। এসব কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ২৩ হাজার ৯৩৫ জন।
শিউলির ভোট দিলো কে : সকাল ১০টায় কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন শিউলি আক্তার। তার ভোটার নম্বর ০২৮৩। বুথে ঢুকে জানতে পারেন তার ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে।

শিউলি আক্তারের এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার লতিফুর রহমান বলেন, তিনি সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ঘটনাটি শুনেছেন। এ ব্যাপারে তার কিছুই করার নেই। কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে তিনটি কেন্দ্র। এর মধ্যে দু’টি কেন্দ্রে দুপুরের পর ধানের শীষের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সকালে যারা এসেছিল তাদেরকে দুপুরের আগে চলে যেতে বলা হয়েছে বলে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করা ধানের শীষের সমর্থকেরা জানান।
ধানের শীষের এজেন্টদের কার্ড ছিনতাই : গাজীপুর সিটিতে বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ছিল না। ভোট শুরুর দিকে কিছু কেন্দ্রে এজেন্ট ছিল। তবে সকাল ১০টার পর তাদের বের করে দেয়া হয়। ধানের শীষের এজেন্টদের কার্ড ছিনিয়ে নেয় নৌকা সমর্থকেরা। কেন্দ্রের বাইরেও বিএনপি নেতাকর্মীদের থাকতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের মহড়া ছিল দিনভর।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নীলেরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে বিএনপির কোনো এজেন্ট নেই। বাইরে ধানের শীষের ব্যাজ পরা কয়েকজনকে দেখা যায়। তারা অভিযোগ করেন, ভোট শুরুর পর পুলিশ এসে তাদের চলে যেতে বলেছে। বিএনপির এজেন্ট শূন্য ওই কেন্দ্রে ভোটের হারও ছিল অস্বাভাবিক। সেখানে প্রথম এক ঘণ্টায় ছয়টি বুথে প্রায় ৭০০ ভোট পড়ে। ওই কেন্দ্রে ভোটার ২৩২৭। কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার সুমন কুমার বসাক দাবি করেন, ধানের শীষের এজেন্টরা এসেছিল। তবে তারা কেন চলে গেলেন তা তিনি জানেন না।
আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নিজ কেন্দ্র কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ধানের শীষের কোনো এজেন্ট ছিল না। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তানজুরুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বিএনপির কোনো এজেন্ট আসেনি। এজেন্ট ঢুকতে পারছে না এমন কোনো অভিযোগ তিনি পাননি।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin